Shomoyer Alo News Details

 08 Mar 2022

img16

ই-কমার্সে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ

দিন বদলেছে। এখন নারীরা ঘরে-বাইরে সবখানে সফল। বাঁধ ভেঙে, দুর্গম পথ অতিক্রম করে এগিয়ে চলার সময় এখন নারীর। ঠিক তেমনই একজন নারী নাসিমা আক্তার নিশা। নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) প্রেসিডেন্ট তিনি। এ ছাড়া ই-ক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। চার বছর আগে খোলা গ্রুপটির (উই) সদস্য এখন ১২ লাখেরও বেশি। যেখানে দেশীয় পণ্য নিয়ে আলোচনা, পরিচিতি করা হয়। সব বয়সি ও পেশার নারীরা যুক্ত রয়েছেন সেখানে। অনেক তরুণের স্বপ্ন তৈরি করেছেন নিশা, উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে তাদের সহায়তাও করেছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর প্রতিবন্ধকতা, এগিয়ে চলার নানা দিক নিয়ে নাসিমা আক্তার নিশার সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক সময়ের আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মামুন সোহাগ

সময়ের আলো : কেমন আছেন? 

নাসিমা আক্তার নিশা : করোনা কেটে যাচ্ছে। প্রায় সবকিছুই স্বাভাবিক, ভালো আছি। তবে বেশ ব্যস্ততায় দিনগুলো পার করছি। 

সময়ের আলো : নাসিমা আক্তার নিশার ব্যক্তিজীবন, শৈশব ও বেড়ে ওঠার গল্পটা যদি বলতেন।

নাসিমা আক্তার নিশা : আমি খুবই সাধারণ একটা মানুষ। যার শৈশব কিশোর কেটেছে এই শহরেই, বনানীতে। বাবার জন্মসূত্রে এখানেই থাকা। বনানীর বাইরে যাওয়া হয়নি কখনও। আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বনানীতেই। বলতে গেলে বন্ধুবান্ধব এখানের, বিয়েও হয়েছে বনানীতে। খুবই রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে আমি। আমাদের পরিবারের কেউ কখনও এসএসসি পর্যন্ত পড়ে; আর পড়ে না। এরপর তারা কোনো চাকরি বা ব্যবসা করবে সেটা তো চিন্তার মধ্যেও আসে না। ঠিক সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আমি আজকের নিশা।

সময়ের আলো : আপনার শিক্ষা জীবন, পরিবার ও সংসার নিয়ে জানতে চাই।

নাসিমা আক্তার নিশা : আমরা চার ভাই, চার বোন। আমি বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। আমার খুব শখ ছিল ল’ পড়ব। ল’ নিয়ে পড়তে হলে যেতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন মনে হতো বাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূরে। আমার সেই সময়ের বয়ফ্রেন্ড ফয়সাল শিকদার (বর্তমানে স্বামী) সেও এতদূর যেতে না দেওয়ার পক্ষে ছিল। শেষমেষ ঘরের পাশে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। ৫৯ বছর বয়সে আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান। এই আফসোসকে আরও বাড়িয়ে দেয় আমার স্বামী। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে আমার স্বামীও পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। এটাই হয়তো নিয়তি... আমার ভালোবাসার মানুষগুলো এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। এখন আমার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আছি। 

সময়ের আলো : দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে আপনার তৈরি করা গ্রুপ ‘উই’। সেখানেও ১২ লাখের বেশি সদস্য। শুরুটা কীভাবে?

নাসিমা আক্তার নিশা : ২০০৫ সাল। আব্বা অসুস্থ। তখনই প্রথম কাজে হাত দিই। আব্বার ব্যবস্থা বুঝিয়ে দেওয়ার পর নিজেই একটা উদ্যোগ নেই। আইটি নিয়ে কাজ করা শুরু করি। আমি বিবিএ, এমবিএ শেষ করেছি। তাই ব্যবসাতেই মনোযোগী হই। আইটিতে কাজ করতে এসে দেখলাম এখানে নারীদের সংখ্যা একেবারে কম। নারীদের অনেক ধরনের প্রতিকূলতা পাচ্ছি। রাস্তাটা মসৃণ না। তখনই মনে হলো নারীদের এমন একটা প্লাটফর্ম নাই কেন যেখানে আমরা নিজেদের কথা বলতে পারব, নিজের সমস্যার সমাধান চাইতে পারব। এমন কিছু একটা থাকা উচিত। যখন খুঁজে পেলাম নারীদের জন্য এমন কোনো উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। কিন্তু চাইলেই তো সব সম্ভব হয় না। ওই যে বললাম, প্রতিবন্ধকতা এরপর ২০১৭ সালে ফেসবুকে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স গ্রুপটা খুলি। প্রথমে ১০ জন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে শুরু করি। আমরা শিখব এখান থেকে, একে অপরকে শেখাব- শুরুটা এই প্রত্যাশায় হয়। বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং প্রোগ্রাম করা শুরু করি। ধীরে ধীরে গ্রুপটাকে আমরা সম্পূর্ণ দেশীয় প্লাটফর্ম হিসেবে রূপদান করলাম।

সময়ের আলো : করোনাকালে কীভাবে জনপ্রিয়তা বাড়ল উইর?

নাসিমা আক্তার নিশা : আমরা চেষ্টা করে গিয়েছি। দিনকে দিন উইর সদস্য সংখ্যা বাড়তে শুরু করল। এর মাঝেই করোনা চলে এলো। ২০২০ সালের মার্চ মাস নাগাদ উইর সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার। সেপ্টেম্বরে গিয়ে সেই সংখ্যা পৌঁছে যায় ১০ লাখে। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ সদস্যে। করোনাকালে সবাই যখন ঘরবন্দি তখন সবাই অনলাইনে কেনাকাটা শুরু করল। করোনাকালেই ঈদ এলো। তখনই ঘটে বাজিমাত। আমাদের নিয়মকানুনগুলো একটু কঠিন করে দিয়েছিলাম। কারণ অনেকেই সহজ জিনিসটা সহজ করে নেয়। চারপাশে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, অনেকে হাহাকার করছে অসুস্থতায়। আমরা সবাইকে বললাম এখানে নেগেটিভ নয় ‘পজিটিভ’ ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করব। 

সময়ের আলো : উই এখন কেমন চলছে? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

নাসিমা আক্তার নিশা : উই গ্রুপটা আমার একার নয়। এবার সবার। আমরা যারা নারী সবাই যাতে একটু হলেও উপকৃত হতে পারি সেজন্যই মূলত গ্রুপটা খোলা। এতদিনে আশা করি অনেকেই উপকৃত হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য দেশীয় পণ্য নিয়ে এগিয়ে চলা। শুধু বাংলাদেশেই নয় বহির্বিশে^র অন্যান্য দেশেও আমাদের পণ্যগুলো যাতে ছড়িয়ে দিতে পারি সেই লক্ষ্যেই এ পথচলা। আমরা চাই আমাদের উদ্যোক্তাদের পণ্য বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেব। প্রত্যেকটা দেশেই একটা করে উইর চ্যাপ্টার থাকবে এবং আশা করছি ১০ বছরের মধ্যেও সেটা সফল হতে পারব। 

সময়ের আলো : আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিনটা আপনাদেরই। একজন নারী হিসেবে আপনার চলার পথ কতটা মসৃণ? 

নাসিমা আক্তার নিশা : প্রতিটা দিনই আমাদের নারীদের দিন। নারীদের জন্য আলাদা করে একটা দিন অবশ্যই থাকা উচিত। কারণ জন্মদিন তো একদিনই হয়। এখনও কোনো নারী যদি গাড়ি চালাতে যায় তাহলে আশপাশের ড্রাইভাররা সাইড দিতে চান না। মেনেই নিতে পারেন না। আমাদের সবাইকে এই মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।  নারী যত সুন্দর হোক বা অসুন্দর হোক; হোক যোগ্য বা অযোগ্য নারীর চলার পথ কখনও মসৃণ নয়। আর প্রতিটা পুরুষের উচিত নারীদের সম্মান করা। তবে আশার কথা হচ্ছে ই-কমার্সসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। 

সময়ের আলো : নিশা, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

নাসিমা আক্তার নিশা : আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর প্রতিবন্ধকতা এবং এগিয়ে চলার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য সময়ের আলোকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

News Link